ফ্রিল্যান্সিং, ফ্রিল্যান্সার নিয়ে ইতিকথা

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে করে, ফ্রিল্যান্সিং কারা করতে পারবে ইত্যাদি।

ফ্রিল্যান্সিং এবং ফ্রিল্যান্সার শব্দ দুইটি একই বিষয়বস্তুর সঙ্গে জড়িত। সেটি হচ্ছে "কাজ"। ব্যবসা হোক আর চাকরি, উপার্জনের জন্য সকলেই কাজ করতে হয়।

ফ্রিল্যান্সিং হল এক ধরনের স্ব-কর্মসংস্থান। কোন কোম্পানির দ্বারা নিযুক্ত হওয়ার পরিবর্তে, ফ্রিল্যান্সাররা নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান করে। তারা চুক্তি বা প্রকল্পের ভিত্তিতে পরিষেবা প্রদান করে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে চাকরির মতো কোন ধরা বাধা নেই যে নয়টা-পাঁচটা ডিউটি করতে হবে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে কাজের অগ্রগতির জন্য অনেকে একটা নির্দিষ্ট সময় করে কাজ করে। যেইটা অনেক ফ্রিল্যান্সারদের জন্য দৈনিক কাজের সময় বলে বিবেচিত হয়।

যারা ফ্রীল্যান্সিং করে তাদের একটা পরিচয় আছে। তাদের বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। কম বেশি সব কর্মক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সার এর দেখা পাওয়া যায়। তবে আজকাল ফ্রিল্যান্সার বলতে গেলে বিশেষ করে অনলাইনে মার্কেটপ্লেস থেকে অথবা কোন বিদেশি ক্লায়েন্ট থেকে কাজ সংগ্রহ করে সেটা সম্পন্ন করাকেই অনেকে ফ্রীল্যান্সিং বলে বুঝেন।

কিন্তু ফ্রীল্যান্সিং এর ব্যাপ্তি বা পরিধি অনেক বড়। শুধুই যে বিদেশি ক্লায়েন্ট এর কাজ করলেই ফ্রিল্যান্সার হবেন তা কিন্তু নয়। ফ্রিল্যান্সিং দেশীয় কোন ক্লায়েন্ট এর কাজ হতে পারে, হতে পারে পরিচিত কোন ব্যক্তির থেকে পাওয়া কাজ ইত্যাদি।

তবে অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে ফ্রিল্যান্স জব/ কাজ সংগ্রহ করা যায় বিধায় ফ্রিল্যান্সিং নামটি সকলের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। কেননা ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যাবহার করে কাজ পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এর পরিধি হিসেব করলে বাংলাদেশ খুব ভালো পর্যায়ে আছে। দেশে প্রচুর পরিমাণে ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্লায়েন্ট এর কাজ সম্পন্ন করেছেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা দেখে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কোর্স প্রোগ্রাম এর আয়োজন করে থাকে। পাশাপাশি উপার্জন যেনো সহজে আনা যায় সে জন্য ব্যাংকগুলোকে ফ্রিল্যান্সার পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য সহজতর করা হয়েছে। সরকার ফ্রিল্যান্সার পেশায় থাকা ব্যক্তিদের প্রণোদনার উদ্যোগ নিয়েছে। অনেকেই উপার্জনের সাথে অতিরিক্ত দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে পাচ্ছেন। যদিও সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী চার শতাংশ পাওয়ার কথা ছিল।

বর্তমান সময়ে চাকরির বাজার অনেক সংকীর্ণ হয়ে গেছে। যে কারণে ফ্রিল্যান্সিং পেশা দিতে পারে বেকারত্ব থেকে সরে আসার সমাধান।

কারা ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন?

ফ্রিল্যান্সার পেশা যেহেতু খুবই বিস্তৃত, আমরা বিষয়টি সহজতর করতে এইটুকু ধরে নিতে পারি যে যারা অনলাইনে/ ইন্টারনেট ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্ট এর কাজ করতে চায়, তারাই এই পোস্ট এর অডিয়েন্স বা আগ্রহী।

যেকোন বয়সের, যেকোন ব্যাক্তিই ফ্রিল্যান্সকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তবে আগ্রহ, ধৈর্য্য, সময় এবং কাজ চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকা জরুরি।

ফ্রিল্যান্সার মানে বুঝতে হবে যে আপনি কোন না কোন কাজে ভালো পারদর্শী। তবে অনলাইন প্লাটফর্মে কাজ করতে হলে ভার্চুয়াল কাজে বেশ পারদর্শী হয়ে জরুরী।

কাজের ধরন হতে পারে প্রোগ্রামিং, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, লোগো/ ব্যানার ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, বিভিন্ন সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করা যেমন অটোক্যাড, গেম ডেভেলপমেন্ট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ইকমার্স মার্কেটিং, বিভিন্ন প্রকার মার্কেটিং, একাউন্টিং ইত্যাদি। অনলাইনে কাজ করার মতো হাজারো পেশা আছে। এবং যোগ্য ফ্রিল্যান্সার এর জন্য তার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাজটি ঠিকই অপেক্ষা করছে।

একজন ফ্রিল্যান্সার হতে কি কি জানা জরুরী?

আপনি ফ্রিল্যান্সার হতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে ফ্রিল্যান্স পেশার প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে। আপনাকে কোন একটা কাজে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য জ্ঞান থাকতে হবে। ক্লায়েন্ট এর সঙ্গে তার উল্লেখিত সময় কাজ করার মতো মানসিকতা থাকতে হবে।

দক্ষতার পাশাপাশি ভালো ইংরেজি জানা থাকা জরুরি। এবং গণিত নিয়ে কাজ করলে গণিতে ভালো জানতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং একটি প্রফেসনাল কার্যক্রম। এখানে অর্ধেক কাজ শিখে না আসা উত্তম। কারণ ল্যাব টেস্ট করার জন্য আপনাকে কেউ হায়ার করবে না। এখানে বাস্তব জীবনের কাজ সমাধান করতে হয়।

সুতরাং, পেশা বাছাইয়ের পূর্বে ভালো করে বুঝে নিন আপনি কোন কাজে ভালো পারদর্শী।